onlinegolpo24
বাংলায় প্রকাশিত প্রথম সম্পূর্ণ অনলাইন গল্প ২৪ ওয়েববুক
এই ব্লগটি সন্ধান করুন
মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
নীরব অনুভূতি
..........................
ভার্সিটির ক্লাস শেষে বের হতেই দেখি আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। মনে হচ্ছে প্রচণ্ড বৃষ্টি হবে। এই আবহাওয়াটা যদিও আমার খুব ভাল লাগে। কিন্তু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরার তাড়া মাথায় নিয়ে রওনা হতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হল।
এই রেহ! ছাতাই তো আনিনি। তাই আর এগিয়েও লাভ নেই। আবার ভার্সিটিতে গিয়ে ঢুকলাম।
কোথায় যাব ভাবছি। হঠাৎ মনে হল, আরে ক্লাসে যাচ্ছি না কেন? যেই ভাবা, সেই কাজ।
কিন্তু ক্লাসে গিয়েই আমি অবাকের চেয়েও বেশি অবাক হলাম। অবশ্য হাসিও পাচ্ছে খুব! একটা মেয়ের কান্না দেখে যদিও আমার মত ছেলের হাসি পাওয়ার কথা না। তবুও হাসি চাপাতে পারছি না!
--কিরে অরণী, কাঁদছিস কেন?
কোনো রকমে হাসি চাপিয়ে অরণীকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
অরণী আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কারণ অরণীর সাথে সাধারণত কেউ কথা বলে না! টানা দুই বছর একসাথে ক্লাস করার পরও আমিও তো ওর সাথে কোনোদিন কথা বলিনি! অবশ্য ও বড়লোকের মেয়ে বলে অনেকে ওর সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কেউই অরণীর সত্যিকারের বন্ধু না।
--জানিস তূর্য, আমাকে না রাজ অনেক বাজে বাজে কথা শুনিয়েছে! আমি এখন কি করব বলতো?
এতক্ষণে আমি অরণীর কান্নার অর্থ খুঁজে পেলাম। রাজ আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে স্মার্ট ছেলে। কথাবার্তায়, চালচলনে কেউই ওর সমান হতে পারবে না। আর অনেক ধনীও।
আমি ভার্সিটির সেই প্রথম দিন থেকেই দেখছি, অরণী রাজের পিছনে ঘুরছে। রাজ ওকে তো পাত্তা দিচ্ছেই না, উল্টো যা নয় তাই বলে যায়। ইচ্ছে মত ওকে দিয়ে এটা ওটা করিয়ে নিচ্ছে। ক্লাসের যত এ্যাসাইনম্যান্ট আছে, সব তো অরণীই ওকে করে দেয়। তারপরেও মেয়েটাকে বাজেভাবে গালিগালাজ করে রাজ। শুধু অরণী বোকাসোকা আনস্মার্ট একটা মেয়ে বলে। রাজ পারেও বটে!
রাজকেও অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না। ও আমাদের ক্লাসেরই সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে অর্পাকে পছন্দ করে। অর্পা আর রাজকে প্রায়ই একসাথে ঘুরতে, আড্ডা দিতে দেখা যায়। তারপরেও দেখছি অরণী হাল ছাড়েনি!
--কি বলল রাজ তোকে আজকে?
--আমি আজকে রাজকে আমার মনের কথা, আমার ফিলিংসের কথা সব বলেছি। কিন্তু ও আমাকে কি বলল জানিস?
বলেই আবার ফোঁপাতে শুরু করল অরণী।
--আরে বলনা! এত নাটক করছিস কেন?
--ও বলেছে, কোনোদিন পেঁচা দেখেছ? আয়নায় গিয়ে দেখ, তাহলেই দেখতে পাবে! বলে ও আর ওর বন্ধুরা সবাই মিলে হাসাহাসি করেছে।
এই বলে অরণী আবার কাঁদতে শুরু করল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসি চাপিয়ে বললাম,
--আসলে কি হয়েছে জানিস? আমরা সবাই সবসময় সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে থাকি। যা আমার কোনোদিনই হবার নয়, তার দিকেই হাত বাড়াই। আমাকেই ধর, আমি ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই অর্পার উপরে ক্রাশ খেয়েছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে যখন দিন গেল, তখন নিজে থেকেই বুঝলাম, ওর পিছনে ছুটে লাভ নেই। তাইতো এখন আর ওকে নিয়ে কোন ফিলিংস কাজ করে না।
--কিন্তু আমি যে রাজকে সত্যিই খুব ভালবাসি। আমি ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না..
আমি আর হাসি ঠেকিয়ে রাখতে পারলাম না। হাসতে হাসতেই বললাম,
--তাহলে তো তোকে ম্যাডাম ফুলির মত চেঞ্জ হতে হবে। অর্পার মত না হলে তো রাজ তোর দিকে ফিরেও তাকাবে না..
আমার কথায় দেখলাম অরণীর চোখ চকচক করছে! আমাকে জিজ্ঞেস করল,
--কিভাবে নিজেকে চেঞ্জ করব? বলনা!
আমার হাসি এবার আর থামছে না। মেয়েটা আমার মজাকেও যে সত্যি ভাববে, তা কে জানত?
কতক্ষণ হাসার পর খুব সিরিয়াস লুক নিয়ে বললাম,
--তোর গেট আপে চেঞ্জ আনতে হবে! তোর এই খ্যাত মোটা ফ্রেমের চশমা আর এই অতি সাধারণ লুক, সব বদলাতে হবে।
আমি এবার অরণীর দিকে ভাল করে তাকিয়ে বললাম,
--তোর চেহারা তো ঠিকই আছে, গায়ের রঙও ভাল। কিন্তু তুই তো একটু সাজিসও না। আর এত লম্বা চুলে বেণী করিস কেন? আসলেই তুই একটা খ্যাতের ডিব্বা!
--আচ্ছা, এগুলো চেঞ্জ করার জন্য কি কি লাগে?
আমি এবার আরও সিরিয়াস লুক নিয়ে বললাম,
--সাইকিয়াট্রিস্ট আর ফ্যাশন ডিজাইনার!
এবার আমার হাসি আর কোনো বাধাই মানল না। আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।
--সাইকিয়াট্রিস্ট আর ফ্যাশন ডিজাইনার? ওরা কি করবে?
--ওরা তোর এই বোকা বোকা ভাব আর বোকা বোকা চেহারা চেঞ্জ করবে। বুদ্ধু কোথাকার!
বৃষ্টি থেমেছে। তাই আমি ওখানে বসে থেকে মেয়েটার বোকা বোকা কথা আর শুনতে চাইলাম না। অরণীকে ওখানে বোকার মত চিন্তিত অবস্থায় বসিয়ে রেখেই আমি হাসতে হাসতে চলে এলাম।
কয়েকদিন পর।
অরণী এখন রাজের পিছনে না, বরং আমার পিছনে ঘুরছে। আর সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার মনে হচ্ছে আমি উটপাখির মত গর্তে মাথা দিয়ে মাটি চাপা দেই! কি যে করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
ক্লাসের সবাই ভাবছে, অরণী এখন রাজকে ছেড়ে আমাকে ধরেছে। সুমন তো সরাসরি বলেই বসল,
--তূর্য, তোর তো দারুণ লাভ হয়েছে রে দোস্ত!
--কেন দোস্ত?
--আরে ব্যাটা আগে মিষ্টি তো খাওয়া!
--কারণ না বললে মিষ্টি খাওয়াব কিভাবে?
--আরে ব্যাটা এত ধনী একটা মেয়েকে পটাইলি, এখন তো তুই সোনায় সোহাগা!
--ধনী আবার কে?
--আরে আমাদের ক্লাসের ধলা চশমা, অরণী!
--ফালতু কথা বাদ দে। আমি গেলাম।
বলে না হয় ওর কাছ থেকে ছোটা গেল, কিন্তু ক্লাসের বাকিরা? ওদের কাছ থেকে কিভাবে পালাব? কি বলব ওদেরকে?
আজকে আবার অরণী আমার কাছে এসেছে। আজকে আর পালালাম না। যা হয় হবে,ওর মুখোমুখি হলাম।
-- কি চাস তুই?
--এতবার তোকে ডাকি, তোর কি কানেও ঢোকে না নাকি? কানে তুলো দিয়ে রেখেছিস?
--আমি কানে ভালই শুনি। কি বলবি সরাসরি বল।
--সরাসরি বলার জন্যই তো তোর পিছনে এতদিন ঘুরছি!
--আরে বলনা!
--তুই যে সাইকিয়াট্রিস্ট আর ফ্যাশন ডিজাইনারের কথা বলেছিলি, ইটা একটু খুলে বল।
--আগে বল, আমি তোকে এই ব্যাপারে সাহায্য করলে তুই আমাকে আমার ব্যাপারে সাহায্য করবি?
--আচ্ছা করব।
--শোন, আমি যেটা এতদিনে বুঝেছি, তা হল, তোর সবকিছুতেই স্মার্টনেসের অভাব আছে। তোর চলাফেরা, কথাবার্তায় চেঞ্জ আনার জন্য একটা সাইকিয়াট্রিস্ট আর গেট আপে চেঞ্জ আনার জন্য একটা ফ্যাশন ডিজাইনার লাগবে। এটাই আমি সেদিন বলেছিলাম।
কোনোমতে একটা কিছু অরণীকে বুঝিয়ে দিলাম। কারণ আমার এখন দরকার ওর কাছ থেকে দূরে থাকা আর ক্লাসমেটদের বিরক্তিকর হাসাহাসি থেকে বাঁচা।
অরণী আমার কথা শুনে বলল,
--সেটা নাহয় বুঝলাম। আমার পরিচিত একজন সাইকিয়াট্রিস্ট আছে। কিন্তু ফ্যাশন ডিজাইনার কোথায় পাই?
এবার আমি পকেট থেকে আমার চেনাজানা এক আপুর কার্ড বের করে অরণীর হাতে ধরিয়ে দিলাম। আমার চেনাজানা সবার কার্ড আমি সবসময় পকেটেই রাখি।
অরণী আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। আমি এতদিনে ওর হাসি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটার হাসিটা তো খুব সুন্দর! একেবারে যেন বুকে গিয়ে বিঁধে। আমি অরণীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি, হঠাৎ শুনলাম ও বলছে,
--কিরে, কিছু বলছিস না যে?
আমি বাস্তবে ফিরে এসে বললাম,
--কি বলব?
--জিজ্ঞেস করছিলাম, তোকে কি ব্যাপারে যেন সাহায্য করার কথা বলছিলি। কাজটা কি?
--ও, হ্যা। কাজটা হল, এই এক বছর তুই আমার সামনে ভার্সিটিতে আসতে পারবি না। কোনো দরকার হলে ফোনে কথা বলবি, কিন্তু সবার সামনে কথা বলতে পারবি না। দেখছিসই তো, সবাই আমাদেরকে নিয়ে উল্টাপাল্টা গুজব ছড়ায়, এতে তোরই ক্ষতি হবে।
--আচ্ছা ঠিক আছে। আর কিছু?
--আমার জন্য এইটুকু করলেই চলবে।
বলে আমার মোবাইল নাম্বারটা অরণীর হাতে দিয়ে চলে আসলাম।
রাতে হঠাৎ দেখি আমার মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। তাতে লেখা-
'তুই কি সত্যিই মনে করিস আমি চেঞ্জ হতে পারব?-অরণী'।
কেন যেন ওর প্রতি খুব মায়া হল। মনে হল মেয়েটাকে সাহস দেই। এই মূহুর্তে ওর সাহসের খুব দরকার। আমি ওকে সাহস দিয়ে মেসেজ পাঠালাম, 'আমার বিশ্বাস, তুই একদিন নিজেকে চেঞ্জ করে খুব সহজেই রাজের মনে জায়গা করে নিবি। তখন দেখবি, তুই না, রাজই তোর পিছে পিছে ঘুরবে!'
অরণী রিপ্লাই দিল, 'আমার এই বিপদের সময় তোর মত একজন ভাল ফ্রেন্ডের সাহসই আমার খুব দরকার ছিল রে।'
এরপরের দিন থেকে অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, ক্লাসে স্যার অরণীর রোল ডাকলে একটা বোরকা পড়া মেয়ে এটেনডেন্স দেয়। বুঝলাম, আমার সাথে যাতে দেখা না হয়, তাই অরণী বোরকা পড়া শুরু করেছে! আমি সেদিন বাসায় ফিরে অনেক হাসলাম। এত সহজ সরল মেয়ে আসলে আমি আমার জীবনে এই পর্যন্ত দেখিনি!
এর কয়েকদিন পর দেখি অরণী আর কারো সাথেই মিশছে না! সবার থেকেই আলাদা হয়ে চলছে। তিন্নি ওর খুব ভাল ফ্রেন্ড। ওকে জিজ্ঞেস করতেই ও রেগে বলল,
--ওই ম্যাডাম ফুলির কথা বলছিস? ওকে তো এতদিন আমরা ভালমত চিনতেই পারিনি যে, ও এত দেমাগি! কি হয়েছে জানিস?
--কি হয়েছে?
--অরণী সেদিন এসে আমাদেরকে বলেছে, ও নাকি নিজেকে চেঞ্জ করে ম্যাডাম ফুলি হবে! আমরা কি বলব? হাসতে হাসতেই গড়াগড়ি খাচ্ছি। বললাম, যা কখনো সম্ভব না, তা করার চেষ্টাও করিস না, পস্তাবি। আর তুই হবি চেঞ্জ? আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস? ও তখন কি বলল জানিস?
--কি বলল?
--ও বলল যে, আমরা নাকি কেউই ওর দুঃসময়ের বন্ধু না। বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল! ন্যাকা একটা।
আমি তিন্নির কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বুঝতে আর বাকি রইল না, অরণী নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য সবকিছু বিসর্জন দিচ্ছে! কেন যেন এই ভেবে অরণীর জন্য মন খারাপ হতে লাগল যে, এখন থেকে ওকে পুরো একাই চলাফেরা করতে হবে!
একবছর পর।
এত তাড়াতাড়ি যে কিভাবে একবছর পার হয়ে গেল টেরই পেলাম না! এই বছরটায় অনেক ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। অবশ্য এই ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও বারবার কেন যেন অরণীর কথা খুব মনে হয়েছে! ওর সরলতা, প্রথম খেয়াল করা সেই মিষ্টি হাসি, ওর বোকা বোকা কথা, সবকিছুই বারবার মনে পড়তে লাগল। অরণীর এই এক বছরের পুরো একাকিত্বকে ভেবে কেন যেন ওর প্রতি আমার মায়া হতে লাগল।
এই এক বছরে যে অরণীর সাথে একেবারেই যোগাযোগ বন্ধ ছিল, তা না। প্রায়ই ওর খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে, সরাসরি না। টেক্সট করে। ওকে সাহস যুগিয়েছি, ওর হতাশা কাটানোর চেষ্টা করেছি। মাঝে মাঝে ওকে মজার কথা বলে হাসানোরও চেষ্টা করেছি। অরণীও কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে মেসেজ দিত।
আজ ভার্সিটি বন্ধ। তাই টিউশনি করানোর জন্য বিকালে বের হচ্ছি, হঠাৎ দেখি মোবাইলে অরণীর মেসেজ এসেছে। সেখানে লেখা-
'এক বছর পর এখন তো আর তোর আমার সাথে সরাসরি দেখা করতে বা কথা বলতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না!'
আমি এর রিপ্লাইয়ে 'না' লিখে পাঠিয়ে দিলাম। এরপর আর কোনো মেসেজই আসল না!
দুইদিন পর।
আজ ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি একটা নতুন মেয়ে আমাদের ক্লাসে এসেছে! কিন্তু ভার্সিটির কোর্সের মাঝখানে কিভাবে নতুন স্টুডেন্ট ভর্তি হতে পারে, তা আমার মাথায় ঢুকল না। আর এই নতুন মেয়ের চেহারার সাথে কার যে চেহারার খুব মিল আছে, তাও মনে করতে পারছি না!
সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মনেই হয়তবা একই প্রশ্ন, কে এই স্মার্ট মেয়েটা যে আমাদের ক্লাসের অর্পাকেও হার মানিয়েছে!
স্যার ক্লাসে এসে যখন রোল ডাকছেন, সবাই খুব সাগ্রহে মেয়েটার রোলের জন্য অপেক্ষা করছিল। স্যার অরণীর রোল ডাকতেই মেয়েটা এটেনডেন্স দিল! সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আর আমি এতক্ষণে খেয়াল করলাম, হ্যা, এটাই তো সেই অরণী!ও যাই চেঞ্জ করুক, ওর তো চেহারার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ক্লাস শেষে আমি বের হয়ে যাচ্ছি, দেখি অরণী আমাকে পিছন থেকে ডাকছে।
--এই তূর্য, একটু দাঁড়া।
আমি পিছন ফিরে বললাম,
--কি বলবি বল।
--আমি তোর সাথে বাসায় যাব। আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারবি না?
আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম, আজকেও সেই এক বছর আগের মতই সবার দৃষ্টি আমার দিকে। কিন্তু সে দৃষ্টিতে এখন আর আগের মত বিদ্রূপ নেই, আছে হিংসা।
আমি অরণীকে কিছু বলতে যাব, সেই মূহুর্তে দেখি, রাজ অরণীকে ডাকছে! অরণী প্রায় না শোনার ভান করে আমাকে টেনে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
এরপরের দিনগুলো থেকে দেখা গেল, অরণী সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকে! ক্লাসের সবাই এখন ওকে ফ্রেন্ড বানাতে চায়, ওর সাথে মিশতে চায়, কিন্তু ও কাউকেই পাত্তা দেয় না। এর মধ্যে অনেকে ওকে প্রপোজও করে ফেলেছে। কিন্তু ও সারাক্ষণ আমার সাথেই আঠার মত লেগে থাকে। আর সবাই আমার দিকে হিংসুটে চোখে তাকায়। আমার অবশ্য ভালই লাগে! কেন যেন মাঝে মাঝে মনে হয়, ও যদি সবসময়ের জন্য এভাবেই আমার সাথে আঠার মত লেগে থাকত! কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামাল দেই। এটা কখনওই হওয়ার নয়। একে তো আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির, তার ওপরে আবার রাজের জন্যই অরণী নিজেকে পরিবর্তন করেছে। সে রাজকেই পছন্দ করবে, আমাকে কখনোই করবে না।
তিন সপ্তাহ পর।
রাজ এতদিন অরণীকে কিছু বলার সু্যোগ পায়নি। কারণ রাজ ডাকলেই অরণী আমাকে নিয়ে প্রায় কোনোরকমে পালিয়েছে! আজকে আর রাজের সহ্য হল না। অরণী বের হওয়ার আগেই রাজ বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। যেই অরণী বাইরে বের হয়েছে, অমনি রাজ তার হাত ধরে বলল,
--চল আমার সাথে।
অরণী বলল, যাব কিন্তু আমার সাথে তূর্যও যাবে!
বলে আমার হাত ধরে প্রায় টানতে টানতে রাজ যেখানে অরণীকে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে নিয়ে চলল। তারপর রাজকে বলল,
--এবার যা বলার বল, তূর্যকে সামনে রেখেই তোমাকে বলতে হবে।
রাজ আমার দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বলল,
--আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। তুমি কি আমাকে এখনো আগের মত ভালবাসো?
রাজের কথা শুনে প্রথমদিকে অরণী না করে দিল। কিন্তু রাজ অনেক কাকুতিমিনতি করার পর অরণী শেষ পর্যন্ত রাজি হল।
আমি এরপর বাসায় ফিরে আসলাম। কিন্তু এক অদ্ভুত অনুভূতিতে নিজেকে আবিষ্কার করলাম! রাজের সাথে অরণীর এই প্রেম হয়ে যাওয়ায় আমি খুশিও হলাম, আবার কেমন যেন কষ্টও আমাকে কুড়ে খাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমার কি যেন হারিয়ে গেছে! খুব শূন্য শূন্য লাগছে সবকিছু। আমি কি তাহলে সেদিনই অরণীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম, যেদিন প্রথম ওর মিষ্টি হাসিটা খেয়াল করেছিলাম? কিন্তু এখন আর বুঝে কি হবে? আমি তো এতদিন নিজেই নিজেকে বুঝতে পারিনি! যা হওয়ার সব তো হয়েই গেছে। সব শেষ এখন আমার!
অরণীকে এখন প্রতিদিনই রাজের সাথে বের হতে দেখি। আমাকে সময় দেয় না, তা না। ক্লাসে সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকে, আর ক্লাসের পর রাজের সাথে। কিন্তু আমার সবসময় মনে হয়, আমার সাথে অরণীর কাটানো সময়গুলো খুব তাড়াতাড়িই কেটে যায়! এখনো প্রতিদিন অরণীর সাথে মেসেজের মাধ্যমে কথা হয়। ও আমাকে প্রায়ই বলে একটা সুন্দর মেয়ে দেখে প্রেম বা বিয়ে করে ফেলতে। কিন্তু আমি তো ওর মাঝেই আটকে গেছি। অরণীই যে আমার প্রথম আর সত্যিকারের প্রেম, তা কি আমি তাকে কখনো বলতে পারব? নাকি নিজের মধ্যে চেপে রেখেই আস্তে আস্তে নিজেকে নিঃশেষ করে দেব?
এক বছর পর।
আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সবাই যার যার ভালবাসার মাঝে আজ সুখ খুঁজে নিচ্ছে! কিন্তু আমি যাচ্ছি অরণীর বাসায় অরণীর দাওয়াতে। সবাইকেই ও আজকে দাওয়াত দিয়েছে। অরণীর বাবা মা নাকি ওকে চাপ দিচ্ছে বিয়ে করার জন্য। তাই সে আজ সবাইকে ডেকেছে যাতে সবার সামনে রাজের সাথে ওর রিলেশনশিপের কথা এনাউন্স করতে পারে। আমি প্রথমে যেতে চাইনি। কি দরকার আমার কাটা ঘায়ে আরও নুনের ছিটা লাগানোর? কিন্তু শেষ পর্যন্ত অরণীর অনুরোধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
অরণীদের বাসায় গিয়ে একটা ধাক্কা খেলাম। এত সুন্দর গোছগাছ বাসা আমি খুব কমই দেখেছি! বাসাটায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ অরণীকে দেখতে পেলাম। এত সুন্দর লাগছে ওকে যে আমি চোখই ফেরাতে পারছি না ওর দিক থেকে! এখন আর সেই মোটা ফ্রেমের চশমা ওর চোখে নেই, তার পরিবর্তে এখন লেন্স পরে। শাড়ি পরে খুব সুন্দর করে খোঁপা করে খোঁপায় ফুল গুঁজেছে! এতেই এত অপূর্ব লাগছে ওকে!
আমাকে দেখেই অরণী তার চিরচেনা সেই মিষ্টি হাসিটা আমাকে উপহার দিল, যেটা দেখেই আমি প্রথম ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম।
আমিও অরণীর দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি হাসলাম।
তারপর ওর বাবা মা এল সবাইকে আপ্যায়ন করতে। খুব হাসিখুশি তাঁরা। মেয়ের পছন্দকেই উনারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
একটু পরেই অরণী এল। পাশেই রাজ দাঁড়িয়ে আছে। সে এসে বলল,
--আজকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভালবাসা দিবস। আর তাই আজকেই আমি আমার পছন্দের মানুষের কথা সবাইকে বলতে চাই, যাকে আমি বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি। যাকে আমি আমার একাকিত্বের সেই এক বছরে চিনতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি যে তাকেই আমার দরকার! তার চেয়ে যোগ্য আর ভাল ছেলে হয়তবা আমার জন্য কেউই হবে না। যার উৎসাহ প্রদানের জন্যই এতদূর অতিক্রম করে আমি নিজেকে জানতে পেরেছি, নিজের মাঝে পরিবর্তন আনতে পেরেছি। যার হয়ত টাকা নেই কিন্তু মেধা আছে, মানুষকে উপকারের মন আছে..
অরণীর কথাগুলো আমি শুনতে পাচ্ছি কিনা তাও টের পাচ্ছি না, নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আর প্রমাদ গুনছি। আর কিছুক্ষণ পরেই আমার অরণী আর আমার থাকবে না। রাজের সাথে সুখের সংসার করবে সে, সাথে থাকবে সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা। আর চিন্তা করতে পারছি না আমি, চলে যাব ভাবছি। কিন্তু এখন এতজনের সামনে থেকে কি চলে যাওয়া ঠিক হবে?
অরণী আবার বলতে শুরু করল,
--কেউ জানতে চাইবেন না এত কেয়ারিং সে ছেলেটা কে? সে হল আমাদের ভার্সিটিতে আমার ক্লাসেই পড়ুয়া তূর্য! আমি তাকেই ভালবাসি।
আমি অরণীর কথা শুনে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! কিন্তু অরণী আমার দিকে তাকিয়েই মিষ্টি হেসে বলতে লাগল,
--তুমি নিশ্চয়ই ভেবেছিলে আমি রাজকে ভালবাসি? কিন্তু তুমি ভুল ভেবেছ! আমি রাজকে ওভাবে ভালবাসতে পারিনি যেভাবে তোমাকে ওই একটা বছর ভালবাসা শুরু করেছিলাম! আমি যখন থেকে মানুষ চিনতে শিখেছি, তখনই বুঝেছি, রাজ নয়, তুমিই আমার যোগ্য। রাজ কখনোই আমার প্রেমে পড়েনি, পড়েছে আমার স্মার্টনেসের প্রেমে। আর এটা তো রাস্তার অহরহ ছেলেরাই পড়ে। কিন্তু তুমি ছিলে আমার বিপদে সাহস যোগানোর সত্যিকারের বন্ধু। আমি আমার সেই একাকিত্বের এক বছরেই তোমার প্রেমে পড়েছি, তূর্য। তোমার কি এর বিরুদ্ধে কোনো অবজেকশন আছে?
আমি হাসতে হাসতে মাথা নেড়ে 'না' বোঝালাম। এই বোকা মেয়েটা যে কখন আমাকে ভালবেসেছে, আমি টেরই পাইনি!
আর রাজ? সে তো আমার দিকে তার ক্ষুব্ধ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে! মনে হচ্ছে আমাকে হাতের কাছে পেলে সে আস্ত চিবিয়ে খাবে!
অরণী এসে আমাকে বলল,
--কি হল? চুপ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? কিছু তো বল!
আমি আনন্দে কি বলব খুঁজে না পেয়ে বললাম,
--তুই আমাকে তুমি করে বললি যে?
--এখন থেকে তুমিও তাই করবে। কারণ আগামী মাসেই আমাদের বিয়ে হবে! বউকে নিশ্চয় ফ্রেন্ডের মত তুই করে ডাকতে পারবে না! ডাকলে তা বেমানান লাগবে।
--কিন্তু আমি কি তোমাকে সুখী করতে পারব?
--সুখ কি শুধুই টাকা-পয়সা দিয়ে হয়? তুমি আমার পাশে থাকলে আমি এমনিতেই সুখী হব। আর বাবা মা তো আমি যাকেই বিয়ে করি না কেন, তাতেই রাজি। কারণ উনারা আমাকে বিশ্বাস করেন। আর আমি তোমাকে।
--আমি কখনোই তোমার বিশ্বাস ভাঙব না, দেখো।
বলে অরণীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
তিন বছর পর।
--কি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব, একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে পারেন না? জানেন না, আপনি দেরি করে বাসায় ফিরলে বাবু রাগ করে!
অভিমানী গলায় অরণীর কথা শুনে হেসে বললাম,
--বাবু রাগ করে নাকি বাবুর মা রাগ করে?
--দুজনেই!
--তাহলে তো রাগ ভাঙাতেই হয়। কিভাবে ভাঙাব?
--যদি বাবুর বাবা সারাক্ষণ বাবুর মায়ের পাশে থাকে তাহলে দুজনেরই রাগ ভাঙবে।
--আছি তো, সারাজীবন থাকব।
বলে অরণীর দিকে তাকালাম। অরণী আমার দিকে তাকিয়ে সেই মিষ্টি হাসি হাসল। যা দেখার জন্য আমি প্রতিনিয়ত ওকে খুশিতে রাখার প্রচেষ্টায় থাকি।
এই তিন বছরে অনেক কিছু ঘটেছে আমাদের জীবনে, আর সবই সুখের ঘটনা। অরণী আমার জীবনে আসার পর থেকে যেন সুখে ভরে যাচ্ছে জীবন!
আমি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছি। খুব ভাল বেতন পাই, আর সম্মানও। আর আমার অরণীও কম যায় না! সে এখন একটা কলেজের প্রফেসর। আমাদের এই সুখের সংসারে একটা নতুন অতিথি আসতে চলেছে! এর চেয়ে আনন্দের খবর আর আমার কাছে নেই। সবাই তাই আমাদের সবার জন্য, বিশেষ করে আমাদের বাবুটার জন্য দোয়া করবেন। ও যেন ওর মায়ের মতই সাহসী আর আত্নবিশ্বাসী হতে পারে।।।
লেখক: অমানিশা তমিস্রা
শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১
প্রিয়ো উক্তি
প্রতিদিন কিছু ইচ্ছেকে পুড়িয়ে মারি প্রতিদিন কিছু ইচ্ছেকে পাঠাই নির্বাসনে
ভালবাসা কি ভীষণ প্রতারক হৃদয় ভেঙেছে যার সেই জানে।
সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯
রোজ নামের একটি মেয়ে
রোজ নামে একটি মেয়ে ছিল যে গোলাপ ফুল খুব পছন্দ করত।।
তার স্বামী তাকে প্রতিটি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপের তোড়া পাঠাতো আর সাথে থাকতো একটি করে কার্ড,
যেখানে লেখা থাকতো সে তাকে কতোটা ভালবাসে।
... কিন্তু হঠাত্ একদিন রোজের স্বামী মারা যায় ।কিন্তু রোজের স্বামী মারা যাওয়ার এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন্স
ডে তেও রোজ একি ভাবে কার্ড সহ গোলাপের তোড়া পেল, কার্ডে লেখা ছিল“আমি গত বছরের এই দিনে তোমাকে
যতটুকু ভালবাসতাম, এখন তার থেকে আরও বেশি ভালবাসি। প্রতিটি বছর পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমার জন্যে আমার এই ভালবাসা আরো বাড়বে”।
রোজ ভাবল, তার স্বামী হয়ত মারা যাওয়ার অনেক আগেই তার জন্যে গোলাপের অর্ডার দিয়ে রেখেছিল আজকের দিনটির জন্যে।
সে মন খারাপ করে ভাবলো এটাই তার শেষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া গোলাপের তোড়া।
সে ফুলগুলিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল আর তার স্বামীর ছবি দেখেই দিনটি কাটিয়ে দিল।
এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল। এই এক বছর ভালবাসার মানুষটিকে ছাড়া একা একা থাকা রোজের জন্য ছিল খুবই কষ্টের।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন সকালে তার বাসায় কে জানি বেল বাজালো। সে দরজা খুলে দেখতে পেল দরজার
সামনে কার্ডসহ গোলাপের তোড়া রাখা। সে অবাক হয়ে কার্ডটিপড়ে দেখল এটা তার স্বামী পাঠিয়েছে।
এবার সে রেগে গেল কেউ তার সাথে মজা করছে ভেবে। সে ফুলের দোকানে সাথেসাথে ফোন করে জানতে চাইলো এই কাজ কে করেছে। দোকানদার তাকে যা
বলল তা হল “আমি জানি আপনার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন, আমি এও জানি আপনি আজকে
আমাকে ফোন করে সব জানতে চাইবেন। আপনারস্বামী আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রাখতেন।
তিনি অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছিলেন আপনাকে যেন প্রতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমার দোকান থেকে গোলাপ ফুল পাঠানো হয়।
তিনি আগাম টাকা পরিশোধ করে গেছেন। আরওএকটি জিনিষ আছে, যা আপনার জানা দরকার।
আপনার স্বামী আমার কাছে আপনার জন্যে একটিবিশেষ কার্ড লিখে রেখে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যদি
আমি কখনো জানতে পারি যে তিনি মারা গেছেন, শুধু তাহলেই যেন কার্ডটি আপনাকে দেয়া হয়। আমি আপনাকে কার্ডটি পাঠিয়ে দিব”।
রোজ যখন কার্ডটি হাতে পেল তখন সে কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটি খুলে দেখতে পেল,
সেখানে তার স্বামী তার জন্যে কিছু লিখে গেছে। সেখানে লিখা ছিল “আমি জানি আমার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে,
এই এক বছরে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে সব সময় সুখী দেখতে চেয়েছি, তোমার চোখের পানি নয়। তাই প্রতি বছর তুমি আমার কাছ থেকে ফুল পাবে।
যখনই তুমি ফুলগুলো পাবে, তখন ফুলগুলোকে দেখে আমাদের ভালবাসার কথা মনে করবে,
মনেকরবে আমাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে। সবসময় হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করবে, আমি জানি এটা
অনেক কঠিন হবে তবুও আমি আশাকরি তুমি পারবে। প্রতি বছর তোমাকে গোলাপ পাঠানো হবে একবার করে। তুমি যদি ফুলগুলোকে কোন একদিন না নাও, তাহলে
দোকানী সেদিন তোমার বাসায় পাঁচবার যাবে দেখার জন্যে যে তুমি বাইরে গেছো কিনা।
শেষবার দোকানী অবশ্যি জানবে তুমি কোথায়। সে তখন ফুলগুলোকে সেখানে পৌছে দিয়ে আসবে যেখানে আর তুমি আবার
একবারের মত একসাথে হব চিরদিনের জন্যে। তুমি সবসময় মনে রাখবে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।প্রতিবিম্বে প্রতিবিম্বে শুধুই তুমি।”
***আপনার জীবনে কখনো না কখনো এমন একজন আসে যে আপনার জীবন কে পুরো বদলে দেয় আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে।
যে আপনাকে উপলব্ধি করতে শেখায় যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।।
তার স্বামী তাকে প্রতিটি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপের তোড়া পাঠাতো আর সাথে থাকতো একটি করে কার্ড,
যেখানে লেখা থাকতো সে তাকে কতোটা ভালবাসে।
... কিন্তু হঠাত্ একদিন রোজের স্বামী মারা যায় ।কিন্তু রোজের স্বামী মারা যাওয়ার এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন্স
ডে তেও রোজ একি ভাবে কার্ড সহ গোলাপের তোড়া পেল, কার্ডে লেখা ছিল“আমি গত বছরের এই দিনে তোমাকে
যতটুকু ভালবাসতাম, এখন তার থেকে আরও বেশি ভালবাসি। প্রতিটি বছর পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমার জন্যে আমার এই ভালবাসা আরো বাড়বে”।
রোজ ভাবল, তার স্বামী হয়ত মারা যাওয়ার অনেক আগেই তার জন্যে গোলাপের অর্ডার দিয়ে রেখেছিল আজকের দিনটির জন্যে।
সে মন খারাপ করে ভাবলো এটাই তার শেষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া গোলাপের তোড়া।
সে ফুলগুলিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল আর তার স্বামীর ছবি দেখেই দিনটি কাটিয়ে দিল।
এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল। এই এক বছর ভালবাসার মানুষটিকে ছাড়া একা একা থাকা রোজের জন্য ছিল খুবই কষ্টের।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন সকালে তার বাসায় কে জানি বেল বাজালো। সে দরজা খুলে দেখতে পেল দরজার
সামনে কার্ডসহ গোলাপের তোড়া রাখা। সে অবাক হয়ে কার্ডটিপড়ে দেখল এটা তার স্বামী পাঠিয়েছে।
এবার সে রেগে গেল কেউ তার সাথে মজা করছে ভেবে। সে ফুলের দোকানে সাথেসাথে ফোন করে জানতে চাইলো এই কাজ কে করেছে। দোকানদার তাকে যা
বলল তা হল “আমি জানি আপনার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন, আমি এও জানি আপনি আজকে
আমাকে ফোন করে সব জানতে চাইবেন। আপনারস্বামী আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রাখতেন।
তিনি অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছিলেন আপনাকে যেন প্রতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমার দোকান থেকে গোলাপ ফুল পাঠানো হয়।
তিনি আগাম টাকা পরিশোধ করে গেছেন। আরওএকটি জিনিষ আছে, যা আপনার জানা দরকার।
আপনার স্বামী আমার কাছে আপনার জন্যে একটিবিশেষ কার্ড লিখে রেখে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যদি
আমি কখনো জানতে পারি যে তিনি মারা গেছেন, শুধু তাহলেই যেন কার্ডটি আপনাকে দেয়া হয়। আমি আপনাকে কার্ডটি পাঠিয়ে দিব”।
রোজ যখন কার্ডটি হাতে পেল তখন সে কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটি খুলে দেখতে পেল,
সেখানে তার স্বামী তার জন্যে কিছু লিখে গেছে। সেখানে লিখা ছিল “আমি জানি আমার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে,
এই এক বছরে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে সব সময় সুখী দেখতে চেয়েছি, তোমার চোখের পানি নয়। তাই প্রতি বছর তুমি আমার কাছ থেকে ফুল পাবে।
যখনই তুমি ফুলগুলো পাবে, তখন ফুলগুলোকে দেখে আমাদের ভালবাসার কথা মনে করবে,
মনেকরবে আমাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে। সবসময় হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করবে, আমি জানি এটা
অনেক কঠিন হবে তবুও আমি আশাকরি তুমি পারবে। প্রতি বছর তোমাকে গোলাপ পাঠানো হবে একবার করে। তুমি যদি ফুলগুলোকে কোন একদিন না নাও, তাহলে
দোকানী সেদিন তোমার বাসায় পাঁচবার যাবে দেখার জন্যে যে তুমি বাইরে গেছো কিনা।
শেষবার দোকানী অবশ্যি জানবে তুমি কোথায়। সে তখন ফুলগুলোকে সেখানে পৌছে দিয়ে আসবে যেখানে আর তুমি আবার
একবারের মত একসাথে হব চিরদিনের জন্যে। তুমি সবসময় মনে রাখবে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।প্রতিবিম্বে প্রতিবিম্বে শুধুই তুমি।”
***আপনার জীবনে কখনো না কখনো এমন একজন আসে যে আপনার জীবন কে পুরো বদলে দেয় আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে।
যে আপনাকে উপলব্ধি করতে শেখায় যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।।
রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯
রোজ সকাল
রোজ সকাল
রোজ সকালে ঘুম থেকে দেরী করে উঠা একটা নিয়মিত রুটিনে পরিনত হয়েছে।
তাই আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নি। আমি অবশ্য নিয়মিত ভার্সিটি যাই নাহ।
বিকেলে স্যারের বাসায় পরতে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।
রাস্তার মোড় পেরুতেই পিছন থেকে একটা মেয়ে ঠিক আমার পাশে এসে আমার পায়ের তালে হাটতে শুরু করেছে।
আমি ব্যাপার টাকে তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম নাহ। কিন্তু পরক্ষনেই তা ভুল প্রমান হলো।
-এই যে , আপনার ফোনটা দিন তোহ।(মেয়ে)
-জ্বী, কি বললেন?
-আচ্ছা আপনাকে দেখে তো সুস্থই মনে হচ্ছে।কিন্তু আপনি যে কানে একটু কম শুনেন তা তো জানা ছিলো নাহ।(মেয়ে)
-হোয়াট ননসেন্স! আমি কানে কম শুনবো কেন?
-তাহলে আমি যা বললাম তা আপনি কি শুনেন নাই?(মেয়ে)
-কি বলছেন আপনি
-আপনার ফোনটা দিন।(মেয়ে)
-কেন? আমি আপনাকে ফোন দিবো কেন? আমি তো আপনাকে চিনি নাহ।
-কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।(মেয়ে)
-কি করে চিনেন?
-আমি আপনাকে ভালবাসি।(মেয়ে)
-কিহ?
-আচ্ছা আপনি কি সত্যিই কানে কম শুনেন? এতে কিন্তু আমার প্রেসটিজ কমবে। আপনি দ্রুত একটা ডাক্তারের শনাপন্ন হবেন। ওকে।(মেয়ে)
-কি যা তা বলছেন আপনি।
-আমি যা তা বলি নি । বলছি যে আমি আপনাকে ভালবাসি।(মেয়ে)
-আর আপনি আমাকে চিনেনই বা কিভাবে?
-আমি আপনাকে রোজ ফলো করি। আপনার নাম ঈষান, আপনি এবার অনার্স ৩য় বর্ষে ঢাবি তে ফিজিক্স নিয়ে পরছেন।(মেয়ে)
(এখন অবশ্য অবাক হবার পালা,গড়্গড় করে একের পর এক ডিটেইলস বললো)
-আআআআপনি এত কিছু জানেন কিভাবে?
-এত কিছুই না, আরো কত কি জানি।(মেয়ে)
-কিন্তু কিভাবে জানেন?
-কারন আমি আপনাকে ভালবাসি।(মেয়ে)
-কেন ?
-আচ্ছা আমি কিন্তু অনেক আগেই আপনার ফোনটা চেয়েছি। ফোনটা দিন এবার।(একটু ঝাড়ি দিয়ে)(মেয়ে)
(আমিও বাধ্য ছেলের মত পকেট থেকে ফোনটা বের করে দিলাম।)
-এই নিন।
(দেখলাম কি যেনো করলো। বাট ঠিক করে খেয়াল করতে পারি নি)
-এই নিন আপনার ফোন।(মেয়ে)
-কি করলেন?
-কিছু নাহ। যান এবার, আপনার পড়ার সময় চলে যাচ্ছে।(মেয়ে)
আমার নামটা তো আগেই জানলেন। আমি কোথায় পড়াশোনা করি তাও জানলেন।
রাতে বাসায় এসে, ফ্রেশ হলাম।খেয়েদেয়ে শুয়ে পরলাম। ফেসবুক গুতাগুতি করছি।রাত প্রায় ১০ টা বাজে।এমন সময় হটাত ফোন, ঐন্দ্রিলা নামটা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো।
গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেলো। আবার ফোন। এবার রিসিভ করতেই হবে।
-আসসালামুয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম।(ঐন্দ্রিলা)
-জ্বী কে বলছেন?
-কানে কম শোনার সাথে সাথে কি চোখেও কম দেখেন নাকি।(ঐন্দ্রিলা)
-চোখে কম দেখবো কেন?
-তাহলে আমাকে আবার জিজ্ঞেস কেন করলেন যে আমি কে? আমার নামটা আপনার ফোনে তো সেভ করাই ছিলো।(ঐন্দ্রিলা)
-ও তার মানে আপনিই সেই অপরিচিতা।
-জি। (ঐন্দ্রিলা)
-তা ফোন করলেন কেন? -এমনি, ভালবাসার মানুষের খোজ খবর নিতে হবে না, তাই আরকি।(ঐন্দ্রিলা) -কিসের ভালবাসা, আমি তো কিছুই বুঝি নাহ।
( এই নিয়ে সেদিন রাতে অনেক কথা হলো, মেয়েটির নামতো অলরেডি পাবলিশড,ঐন্দ্রিলা এবার আমারই ভার্সিটির ১ম বর্ষের ছাত্রী।)
আজ অনেকটা দিন হয়ে গেলো ঐন্দ্রিলার সাথে আমার পরিচয়, আমি ওকে অপরিচিতাই ডাকতাম।
কিন্তু ভালবাসাই আমি বিশ্বাসি নাহ।বিশ্বাসি না বললে ভুল হবে, বিয়ের আগে বিশ্বাসি নাহ।
জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে।
কার সাথে কার বিয়ে হবে তা শুধু একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন।
এক জনের আমানতের উপর আমার কোন অধিকার থাকতে পারে নাহ, না নেই।
আমি যে মেয়েকে ভালবাসি তাকে আদোউ পাবো কিনা তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? না নেই।
সে তো অন্য কারো আমানতও হতে পারে।
তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বিয়ে যাকে করবো তাকেই ভালবাসবো।
পড়শুনা কমপ্লিট করে একটা সরকারী চাকুরী করছি।
আমার অবশ্য চাকরী না করলে কারো কোন ক্ষতি হবে নাহ।
আজ অফিস বন্ধ, কারন আজ শনিবার,সরকারি অফিস গুলোতে শনিবার দিন কাজ বন্ধ থাকে।তাই খুব বেলা করে ঘুমাচ্ছি।
পাশের রুম থেকে হো হো হাসাহাসির আওয়াজ পাচ্ছি।তার মানে কোন মেহমান এসেছে।
ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে গেয়ে ১২০ ভোল্টের একটা শক খেলাম।
একি , চোখটা ভালোভাবে কচলিয়ে আবার তাকালাম।
আরে এই মেয়েটার তো সাহস কম নাহ। আমার বাসায় চলে আসছে।
আর আমার বোন , মা সবাই তো আসর জমিয়ে ফেলেছে।
আমি আবার আমার রুমে এসে বিছানায় গা টা হেলিয়ে দিলাম।
আমারও যে ঐন্দ্রিলাকে ভাল লাগে না তা নাহ।আমারও ওকে ভাল লাগে।হটাত দরজায় নক।
দেখি ঐন্দ্রিলা আমার দিকেই আসছে।
এসেই আমার উপর চড়ে বসলো।
-কি বলছিলে তুমি, আমাকে ভালবাসতে পারবে না, তাই নাহ? এবার দেখো ।(ঐন্দ্রিলা)
এই বলেই আমার রুম থেকে চলে গেলো।
আমি তো পুরো বলদ হয়ে গেলাম।চুপচাপ বসে আছি।
রাতে আদিবা(ছোট বোন) রুমে আসলো।
-কিরে তলে তলে এতদূর, আর আমরা কিছুই টের পেলাম নাহ।(আদিবা)
-কি যাতা বলছিস। কথা না পেচিয়ে সোজাসুজি বল।
-এই আমার সাথে ন্যাকামি করবি না একদম। মেয়েটার সাথে তোর রিলেশন আমাদের জানাস নাই কেন?(আদিবা)
-কি বলিস, কোন মেয়ে, কার সাথে রিলেশন?
-আকাশ থেকে পরছিস মনে হচ্ছে।(আদিবা)
-ঐন্দ্রিলা আপুর সাথে যে তোর এক বছরের রিলেশন তা আমাকে বলিস নি কেন?
আর তোকে বিয়ের কথা বললেই পালাস। এবার তোর বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।(আদিবা)
-যা খুসি তাই কর।
কিছুক্ষন পর আবার আম্মুর আগমন।
-এই মেয়েটার নাম্বার দে তোহ, আমি নাম্বারটা রাখতে ভুলে গেছি।
-কোন মেয়ের নাম্বার?
-কোন মেয়ে মানে? তুই যাকে বিয়ে করবি তার নাম্বার।
-আমি আবার কাকে বয়ে করবো।
-ঐন্দ্রিলার নাম্বারটা দে।
সব কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে। সামনের মাসের ২৪ তারিখ নাকি আমার বিয়ে।
এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করেই ছাড়বে।বিয়ের দিন তারিখ ঘনিয়ে এলো। আজকে আমার বাসর রাত, সরি আমাদের বাসর রাত। সব কিছু খুব থীজি স্পিডে হয়ে গেলো।
-কিরে এখানে দারিয়ে কি করছিস?(আম্মু)
-কিছু নাহ।
-যা রুমে যা, বউমা অপেক্ষা করছে।(আম্মু)
পরিশেষে রুমের দিকে যাবার জন্য পা বারালাম।রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। এক বিরাট মাপের ঘোমটা দিয়ে খাটের উপর কে যে বসে আছে তা বুঝা যাচ্ছে নাহ।
তাই বুঝার জন্য কাছেই যেতে হবে। কাছে যাবার সাথে সাথে ঘোমটা খুলে যা দেখলাম, তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম নাহ।
আপনারা আবার অন্য কিছু মনে কইরেন নাহ যে কি দেখলাম।দেখিছি আমার বউকে। ঐন্দ্রিলা দেখতে এমনিতেই অনেক সুন্দর।
আর আজ আমার মনের আশা পুরন হলো। এখন থেকে আমার সব ভালবাসা আমার বউয়ের জন্য।
বাসর রাতে কি কি হয় তা কম বেশি সব বয়সের মেয়ে ছেলেদেরই কম বেশি জানা আছে। কারন আজকাল ছেলে মেয়েরা ইচড়ে পাকা।
তাই এই কথা গুলো না বলাই ভালো। রাতে অনেক দুষ্টমির পর। ঘুমিয়ে পরলাম। সকাল হয়ে গেছে অনেক আগে।
কিন্তু পাশে হাত দিয়ে দেখি কেউ নেই। তার মানে ঐন্দ্রিলা আরোও আগে উঠেছে। আমি আবার বিছানায় শুয়ে পরলাম।
কিছুক্ষন পর ঐন্দ্রিলার আগমন। মনে হচ্ছে গোসল করে এসেছে। ভেজা চুল গুলো তার উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের পিঠে ঝাপটে আছে। পড়নে হলুদ কালারের একটা শাড়ী।
হলুদ রঙ টাতে তাকে খুব ভালোই মানায়। জানালা খুলতে যাবে ঠিক তখনই এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম।
-এই ছাড়ো , কেউ দেখে ফেলবে।দরজা কিন্তু খোলা।(ঐন্দ্রিলা)
-না কেউ দেখবে নাহ।
-ছাড়ো বলছি, সারারাত খালি দুষ্টমি করছো, এখন আবার শুরু করছো।(ঐন্দ্রিলা)
-আমার বউ, আমি যা ইচ্ছে তাই করবো।
-উফফ এত ছেলে মানুষি করো নাতো। ছাড়ো।(ঐন্দ্রিলা)
-ওকে, তাহলে একটা পাপ্পি দাও, তাহলে ছাড়বো, নাহলে আজ আর ছাড়ছি না।
-ওকে দিবো, তার আগে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আসি, তা না হলে কেউ দেখে ফেলবে।(ঐন্দ্রিলা)
-ওকে যাও।
-হাহা। বোকা হাদারাম কোথাকার, তুমি এখন আরো বেশি করে ঘুমাও, আমি যাচ্ছি,(ঐন্দ্রিলা)
-এই এই, তুমি কিন্তু চিটিং করছো,
ফ্রেশ হয়ে অফিসে গেলাম।
আজকে নিজের টাই নিজেই বেধে ফেললাম, বউকে দিয়ে টাই বাধালে নাকি ভালবাসা বাড়ে, কিন্তু আজ সেটা হলো
অফিসে চলে গেলাম, এর মাঝে অনেক কথা হয়েছে। রাতে বাসায় ফিরে আসলাম।
পরের দিন সকালে টাই বাধার জন্য ঐন্দ্রিলাকে ডাক দিলাম।
-এই আমার টাইটা একটু বেধে দাও তোহ।
-এত বড় হয়েছো একটা টাই ও বাধতে পারো নাহ?(ঐন্দ্রিলা)
(ঐন্দ্রিলা আমার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আমার টাই বাধছে, আর আমি তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি।
মেয়েটির নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছিলো। বেশ ভালোই লাগছিলো।)
-এখন কই যাবা, সোনা।
-এই ছাড়ো , প্লিজ।(ঐন্দ্রিলা)
-উহুম, আজ আর ছাড়ছি না, তোমাকে বিশ্বাস নেই, তুমি আবার পালাবে।
তাই তার সেই গোলাপী ঠোটে এক লম্বা পাপ্পি দিয়ে দিলাম।
-আজ রাতে তুমি বাসায় আসো তার পর তোমার মজা দেখাচ্ছি।
অত-পর রোজ সকালে টাই বাধার সাথে সাথে একটা পাপ্পি ফ্রী।
ভালবাসাটা সত্যিই অন্যরকম
তাই আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নি। আমি অবশ্য নিয়মিত ভার্সিটি যাই নাহ।
বিকেলে স্যারের বাসায় পরতে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।
রাস্তার মোড় পেরুতেই পিছন থেকে একটা মেয়ে ঠিক আমার পাশে এসে আমার পায়ের তালে হাটতে শুরু করেছে।
আমি ব্যাপার টাকে তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম নাহ। কিন্তু পরক্ষনেই তা ভুল প্রমান হলো।
-এই যে , আপনার ফোনটা দিন তোহ।(মেয়ে)
-জ্বী, কি বললেন?
-আচ্ছা আপনাকে দেখে তো সুস্থই মনে হচ্ছে।কিন্তু আপনি যে কানে একটু কম শুনেন তা তো জানা ছিলো নাহ।(মেয়ে)
-হোয়াট ননসেন্স! আমি কানে কম শুনবো কেন?
-তাহলে আমি যা বললাম তা আপনি কি শুনেন নাই?(মেয়ে)
-কি বলছেন আপনি
-আপনার ফোনটা দিন।(মেয়ে)
-কেন? আমি আপনাকে ফোন দিবো কেন? আমি তো আপনাকে চিনি নাহ।
-কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।(মেয়ে)
-কি করে চিনেন?
-আমি আপনাকে ভালবাসি।(মেয়ে)
-কিহ?
-আচ্ছা আপনি কি সত্যিই কানে কম শুনেন? এতে কিন্তু আমার প্রেসটিজ কমবে। আপনি দ্রুত একটা ডাক্তারের শনাপন্ন হবেন। ওকে।(মেয়ে)
-কি যা তা বলছেন আপনি।
-আমি যা তা বলি নি । বলছি যে আমি আপনাকে ভালবাসি।(মেয়ে)
-আর আপনি আমাকে চিনেনই বা কিভাবে?
-আমি আপনাকে রোজ ফলো করি। আপনার নাম ঈষান, আপনি এবার অনার্স ৩য় বর্ষে ঢাবি তে ফিজিক্স নিয়ে পরছেন।(মেয়ে)
(এখন অবশ্য অবাক হবার পালা,গড়্গড় করে একের পর এক ডিটেইলস বললো)
-আআআআপনি এত কিছু জানেন কিভাবে?
-এত কিছুই না, আরো কত কি জানি।(মেয়ে)
-কিন্তু কিভাবে জানেন?
-কারন আমি আপনাকে ভালবাসি।(মেয়ে)
-কেন ?
-আচ্ছা আমি কিন্তু অনেক আগেই আপনার ফোনটা চেয়েছি। ফোনটা দিন এবার।(একটু ঝাড়ি দিয়ে)(মেয়ে)
(আমিও বাধ্য ছেলের মত পকেট থেকে ফোনটা বের করে দিলাম।)
-এই নিন।
(দেখলাম কি যেনো করলো। বাট ঠিক করে খেয়াল করতে পারি নি)
-এই নিন আপনার ফোন।(মেয়ে)
-কি করলেন?
-কিছু নাহ। যান এবার, আপনার পড়ার সময় চলে যাচ্ছে।(মেয়ে)
আমার নামটা তো আগেই জানলেন। আমি কোথায় পড়াশোনা করি তাও জানলেন।
রাতে বাসায় এসে, ফ্রেশ হলাম।খেয়েদেয়ে শুয়ে পরলাম। ফেসবুক গুতাগুতি করছি।রাত প্রায় ১০ টা বাজে।এমন সময় হটাত ফোন, ঐন্দ্রিলা নামটা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো।
গভীরভাবে ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেলো। আবার ফোন। এবার রিসিভ করতেই হবে।
-আসসালামুয়ালাইকুম।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম।(ঐন্দ্রিলা)
-জ্বী কে বলছেন?
-কানে কম শোনার সাথে সাথে কি চোখেও কম দেখেন নাকি।(ঐন্দ্রিলা)
-চোখে কম দেখবো কেন?
-তাহলে আমাকে আবার জিজ্ঞেস কেন করলেন যে আমি কে? আমার নামটা আপনার ফোনে তো সেভ করাই ছিলো।(ঐন্দ্রিলা)
-ও তার মানে আপনিই সেই অপরিচিতা।
-জি। (ঐন্দ্রিলা)
-তা ফোন করলেন কেন? -এমনি, ভালবাসার মানুষের খোজ খবর নিতে হবে না, তাই আরকি।(ঐন্দ্রিলা) -কিসের ভালবাসা, আমি তো কিছুই বুঝি নাহ।
( এই নিয়ে সেদিন রাতে অনেক কথা হলো, মেয়েটির নামতো অলরেডি পাবলিশড,ঐন্দ্রিলা এবার আমারই ভার্সিটির ১ম বর্ষের ছাত্রী।)
আজ অনেকটা দিন হয়ে গেলো ঐন্দ্রিলার সাথে আমার পরিচয়, আমি ওকে অপরিচিতাই ডাকতাম।
কিন্তু ভালবাসাই আমি বিশ্বাসি নাহ।বিশ্বাসি না বললে ভুল হবে, বিয়ের আগে বিশ্বাসি নাহ।
জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে।
কার সাথে কার বিয়ে হবে তা শুধু একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন।
এক জনের আমানতের উপর আমার কোন অধিকার থাকতে পারে নাহ, না নেই।
আমি যে মেয়েকে ভালবাসি তাকে আদোউ পাবো কিনা তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? না নেই।
সে তো অন্য কারো আমানতও হতে পারে।
তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বিয়ে যাকে করবো তাকেই ভালবাসবো।
পড়শুনা কমপ্লিট করে একটা সরকারী চাকুরী করছি।
আমার অবশ্য চাকরী না করলে কারো কোন ক্ষতি হবে নাহ।
আজ অফিস বন্ধ, কারন আজ শনিবার,সরকারি অফিস গুলোতে শনিবার দিন কাজ বন্ধ থাকে।তাই খুব বেলা করে ঘুমাচ্ছি।
পাশের রুম থেকে হো হো হাসাহাসির আওয়াজ পাচ্ছি।তার মানে কোন মেহমান এসেছে।
ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে গেয়ে ১২০ ভোল্টের একটা শক খেলাম।
একি , চোখটা ভালোভাবে কচলিয়ে আবার তাকালাম।
আরে এই মেয়েটার তো সাহস কম নাহ। আমার বাসায় চলে আসছে।
আর আমার বোন , মা সবাই তো আসর জমিয়ে ফেলেছে।
আমি আবার আমার রুমে এসে বিছানায় গা টা হেলিয়ে দিলাম।
আমারও যে ঐন্দ্রিলাকে ভাল লাগে না তা নাহ।আমারও ওকে ভাল লাগে।হটাত দরজায় নক।
দেখি ঐন্দ্রিলা আমার দিকেই আসছে।
এসেই আমার উপর চড়ে বসলো।
-কি বলছিলে তুমি, আমাকে ভালবাসতে পারবে না, তাই নাহ? এবার দেখো ।(ঐন্দ্রিলা)
এই বলেই আমার রুম থেকে চলে গেলো।
আমি তো পুরো বলদ হয়ে গেলাম।চুপচাপ বসে আছি।
রাতে আদিবা(ছোট বোন) রুমে আসলো।
-কিরে তলে তলে এতদূর, আর আমরা কিছুই টের পেলাম নাহ।(আদিবা)
-কি যাতা বলছিস। কথা না পেচিয়ে সোজাসুজি বল।
-এই আমার সাথে ন্যাকামি করবি না একদম। মেয়েটার সাথে তোর রিলেশন আমাদের জানাস নাই কেন?(আদিবা)
-কি বলিস, কোন মেয়ে, কার সাথে রিলেশন?
-আকাশ থেকে পরছিস মনে হচ্ছে।(আদিবা)
-ঐন্দ্রিলা আপুর সাথে যে তোর এক বছরের রিলেশন তা আমাকে বলিস নি কেন?
আর তোকে বিয়ের কথা বললেই পালাস। এবার তোর বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।(আদিবা)
-যা খুসি তাই কর।
কিছুক্ষন পর আবার আম্মুর আগমন।
-এই মেয়েটার নাম্বার দে তোহ, আমি নাম্বারটা রাখতে ভুলে গেছি।
-কোন মেয়ের নাম্বার?
-কোন মেয়ে মানে? তুই যাকে বিয়ে করবি তার নাম্বার।
-আমি আবার কাকে বয়ে করবো।
-ঐন্দ্রিলার নাম্বারটা দে।
সব কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে। সামনের মাসের ২৪ তারিখ নাকি আমার বিয়ে।
এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করেই ছাড়বে।বিয়ের দিন তারিখ ঘনিয়ে এলো। আজকে আমার বাসর রাত, সরি আমাদের বাসর রাত। সব কিছু খুব থীজি স্পিডে হয়ে গেলো।
-কিরে এখানে দারিয়ে কি করছিস?(আম্মু)
-কিছু নাহ।
-যা রুমে যা, বউমা অপেক্ষা করছে।(আম্মু)
পরিশেষে রুমের দিকে যাবার জন্য পা বারালাম।রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। এক বিরাট মাপের ঘোমটা দিয়ে খাটের উপর কে যে বসে আছে তা বুঝা যাচ্ছে নাহ।
তাই বুঝার জন্য কাছেই যেতে হবে। কাছে যাবার সাথে সাথে ঘোমটা খুলে যা দেখলাম, তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম নাহ।
আপনারা আবার অন্য কিছু মনে কইরেন নাহ যে কি দেখলাম।দেখিছি আমার বউকে। ঐন্দ্রিলা দেখতে এমনিতেই অনেক সুন্দর।
আর আজ আমার মনের আশা পুরন হলো। এখন থেকে আমার সব ভালবাসা আমার বউয়ের জন্য।
বাসর রাতে কি কি হয় তা কম বেশি সব বয়সের মেয়ে ছেলেদেরই কম বেশি জানা আছে। কারন আজকাল ছেলে মেয়েরা ইচড়ে পাকা।
তাই এই কথা গুলো না বলাই ভালো। রাতে অনেক দুষ্টমির পর। ঘুমিয়ে পরলাম। সকাল হয়ে গেছে অনেক আগে।
কিন্তু পাশে হাত দিয়ে দেখি কেউ নেই। তার মানে ঐন্দ্রিলা আরোও আগে উঠেছে। আমি আবার বিছানায় শুয়ে পরলাম।
কিছুক্ষন পর ঐন্দ্রিলার আগমন। মনে হচ্ছে গোসল করে এসেছে। ভেজা চুল গুলো তার উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের পিঠে ঝাপটে আছে। পড়নে হলুদ কালারের একটা শাড়ী।
হলুদ রঙ টাতে তাকে খুব ভালোই মানায়। জানালা খুলতে যাবে ঠিক তখনই এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম।
-এই ছাড়ো , কেউ দেখে ফেলবে।দরজা কিন্তু খোলা।(ঐন্দ্রিলা)
-না কেউ দেখবে নাহ।
-ছাড়ো বলছি, সারারাত খালি দুষ্টমি করছো, এখন আবার শুরু করছো।(ঐন্দ্রিলা)
-আমার বউ, আমি যা ইচ্ছে তাই করবো।
-উফফ এত ছেলে মানুষি করো নাতো। ছাড়ো।(ঐন্দ্রিলা)
-ওকে, তাহলে একটা পাপ্পি দাও, তাহলে ছাড়বো, নাহলে আজ আর ছাড়ছি না।
-ওকে দিবো, তার আগে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আসি, তা না হলে কেউ দেখে ফেলবে।(ঐন্দ্রিলা)
-ওকে যাও।
-হাহা। বোকা হাদারাম কোথাকার, তুমি এখন আরো বেশি করে ঘুমাও, আমি যাচ্ছি,(ঐন্দ্রিলা)
-এই এই, তুমি কিন্তু চিটিং করছো,
ফ্রেশ হয়ে অফিসে গেলাম।
আজকে নিজের টাই নিজেই বেধে ফেললাম, বউকে দিয়ে টাই বাধালে নাকি ভালবাসা বাড়ে, কিন্তু আজ সেটা হলো
অফিসে চলে গেলাম, এর মাঝে অনেক কথা হয়েছে। রাতে বাসায় ফিরে আসলাম।
পরের দিন সকালে টাই বাধার জন্য ঐন্দ্রিলাকে ডাক দিলাম।
-এই আমার টাইটা একটু বেধে দাও তোহ।
-এত বড় হয়েছো একটা টাই ও বাধতে পারো নাহ?(ঐন্দ্রিলা)
(ঐন্দ্রিলা আমার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আমার টাই বাধছে, আর আমি তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছি।
মেয়েটির নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছিলো। বেশ ভালোই লাগছিলো।)
-এখন কই যাবা, সোনা।
-এই ছাড়ো , প্লিজ।(ঐন্দ্রিলা)
-উহুম, আজ আর ছাড়ছি না, তোমাকে বিশ্বাস নেই, তুমি আবার পালাবে।
তাই তার সেই গোলাপী ঠোটে এক লম্বা পাপ্পি দিয়ে দিলাম।
-আজ রাতে তুমি বাসায় আসো তার পর তোমার মজা দেখাচ্ছি।
অত-পর রোজ সকালে টাই বাধার সাথে সাথে একটা পাপ্পি ফ্রী।
ভালবাসাটা সত্যিই অন্যরকম
শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৯
বৃষ্টি নামের মেয়েটি
আমি খুব অস্থিরতার মধ্যে আছি তোমাকে একটা সত্য কোনো ভাবেই বোঝাতে না পেরে।
একটা মানুষ আর কতো কদর্য ভাবে বলতে পারে আমি জানি না। আমি তোমাকে ভালোভাবে বলেছি, আবার অনেক কদর্যভাবেও বলেছি।
কোনোভাবে বলেই যখন কাজ হচ্ছে না তখন আমি সত্যিই দিশেহারা। তুমি প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছ, আমার কারণে, আমার ব্যবহারে।
অথচ আমি এটা চাই না। এভাবে কষ্ট পাওয়া তোমাকে মানায় না।
আজকাল তোমার কথা ভাবতে গেলেই বারবার সেই বিখ্যাত আমেরিকান গল্পটা মনে পড়ে। গল্পটা শোনো। তোমার জন্যে খুব প্রযোজ্য।
এক বালকের খুব বাঁশি বাজানোর শখ। সে স্কুল যাবার সময় পথে একদিন এক বংশীবাদককে বাঁশি বাজাতে দেখে।
সেই বাঁশি ওয়ালা হয়তো অতো চমৎকার বাঁশি বাজায় নি; কিন্তু জীবনে প্রথম শোনা সেই বাঁশির মিষ্টি সুর ভীষণ মুগ্ধ করে তাকে।
হঠাৎ করেই বাঁশির প্রতি এক দুর্নিবার টান অনুভব করে সে। তারপরেই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সেও বাঁশি বাজানো শিখবে।
সেদিন বাসা ফিরেই সে তার বাবাকে সেই বঁশিওয়ালার কথা বললো। তারপরেই চেয়ে বসলো তার নিজের জন্যে একটা বাঁশি।
বললো, সেও সেই রকম সুন্দর করে বাঁশি বাজানো শিখবে। বাবা তার কথা শুনলেন। হাসলেন।
কিন্তু ছেলের পড়াশুনার ক্ষতি হবে বা এসব ঠুনকো আবেগকে পাত্তা দেয়া উচিৎ নয় ভেবে বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক বাঁশি কিনে দিতে রাজি হলেন না।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চেয়ে চেয়ে বাবার কাছ থেকে বাঁশি কিনে না পেয়ে মনের দূ:খে সে সিদ্ধান- নিলো যে সে নিজেই একটা বাঁশি কিনবে।
স্কুলে টিফিন খাবার জন্যে প্রতিদিনই মা তাকে কিছু পয়সা কড়িদিতেন
। সে টিফিন খাওয়া বন্ধ করেদিয়ে সেইটাকা জমাতে লাগলো বাঁশি কিনবে বলে। এদিকে বাঁশি কেনার দুশ্চিন্তায় তার দিন কাটেনা,রাত কাটে না।
কখন তার টাকা জমবে, আর কখন সে বাঁশি কিনবে! মহা অস্থিরতা মনে মনে। প্রতিদিনই সে টাকা গুনে দেখে আর টাকা
বেশি করে জমছে না দেখে মন খারাপ করে বসে থাকে। বাঁশির দাম সে জানে না,
কিন্তু যে বাঁশিতে এতো সুন্দর প্রাণ উতলা করা সুর ওঠে সে বাঁশির দাম নিশ্চয়ই কম নয়- এমনই তার ধারণা।
মাস দুয়েক পর একদিন সকালে সে স্কুল ফাঁকি দিয়েবাঁশি কিনতে বেরিয়ে পড়লো। সংগে দুই মাসে জমানো সমস্ত টাকা।
কিছুদিন আগে সে তার এক বন্ধুর সংগে গিয়ে শহরের মাঝামাঝিতে অবস্থিত একটা বাঁশির দোকান চিনে এসেছিলো।
এখন ছুটলো সোজা সেই দোকানে। একটা কালো লম্বা সরু বাঁশি তার পছন্দ হলো।
এরকমই একটা বাঁশি সে সেই বাঁশিওয়ালাকে বাঁজাতে দেখেছিলো। সেই মোহনীয় সুর তুলতে হলে তাকেও এই বাঁশিই কিনতে হবে।
বালক বাঁশিটি হাতে নিয়ে দোকানীর সামনে গেলো। তারপর তার প্যান্টের পকেট উল্টে সবগুলো টাকা আর কয়েন ঢেলে দিলো মেঝেতে।
তারপর বললো, আমি এই বাঁশিটা কিনবো। দেখুন তো এই টাকার হয় কিনা।
দোকানী দেখলো অনেকগুলো খুচরো কয়েন। বললো, আমি গুণে দেখি, তুমি ততোক্ষণে অন্য বাঁশিগুলোও দেখতে পারো।
দোকানীর কথামতো সে গ্যালারীর সামনে এসে অন্য বাঁশি গুলো দেখতে লাগলো। কিন্তু আর বাঁশি দেখে কি হবে?
সে তো স্থির করেই ফেলেছে যে হাতের কালো বাঁশিটিই সে কিনবে, অন্য বাঁশি নয়। তাতে দাম যতোই লাগুক।
দোকানী গুণে দেখলো যে প্রায় পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু সেই বাঁশির দাম তো মাত্র পাঁচ টাকা। দোকানীর সন্দেহ হলো।
এতো টাকা এই বাচ্চা ছেলে পেলো কোথায়? নিশ্চয়ই তার বাবা মা তাকে বাঁশি কেনার জন্যে এতো টাকা দেয় নি?
তাদের তো মোটামুটি দাম জানা থাকার কথা। তাহলে কি এই বালক বাসা থেকে টাকা চুরি করে এনেছে?
এ কথাই জিজ্ঞেস করার জন্যে দোকানী ডাকলো বালটিকে, “এই যে বাবু, এদিকে এসো।” বালকটি ভাবলো, বোধায় টাকা কম আছে।
দামে হচ্ছে না। কিন্তু আমার কাছে তো আর কোনো টাকা নেই। কিন্তু এ বাঁশি তো আমার কিনতেই হবে।
আজ এবং এক্ষুণি। সে তৎক্ষনাৎ ঠিক করে ফেললো যে সে আর দোকানীকে কোনো টাকাও দেবে না, দোকানীর কোনো কথাও শুনবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ। দোকানীর দিকে না গিয়ে সে বাঁশি নিয়ে দিলো দৌড়। দোকানী প্রথমে থতোমতো খেয়ে গেলো। একি! ছেলেটা কি পয়সা ফেরত নেবে না?
পর মুহূর্তে দোকানীও দৌড়ে এলো। কিন্তু ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বালকটি দৌড়ে দিয়ে সোজা রাস্তায় না গিয়ে
একটা গলিতে ঢুকে পড়েছে। দোকানী আর দেখতে পেলো না তাকে।
সেদিন বালকটি আর স্কুলে গেলো না। স্কুল ছেড়ে দূরের এক মাঠে গিয়ে মনের আনন্দে ইচ্ছে মতো বাঁশি বাজালো।
বাঁশি বাজানো হচ্ছে না, সুর উঠছে না, তবু খুশিতে সে আত্মহারা। মনে মনে স্বপ্ন দেখছে সেও একদিন সেই বংশীবাদকের
মতো মধুর সুর তুলবে বাঁশিতে। দুপুর পার করে বিকেল পর্যন্ত সে সেই নির্জন মাঠে বাঁশি বাজালো। না খেয়ে কোনো খাবার, না পিয়ে কোনো পানীয়।
ক্ষুধা তৃষ্ণার সব উপলব্ধি যেনো নিঃশেষ হয়ে গেছে বাঁশি পেয়ে।
স্কুল ব্যাগে বাঁশিটি ভরে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে প্রতিদিনের মতো যথাসময়ে বাড়ি ফিরলো সে।
প্রথমে ভেবেছিলো যে বাবা মাকে বাঁশি কেনার কথাটা বলবে না। কিন্তু পরে ভাবলো, সে তো আর টাকা চুরি করে বাঁশি কিনে নি, বরং টিফিন
খাওয়ার নিজের পয়সা বাঁচিয়ে কিনেছে। এটা তো তার গর্বেরই বিষয়। এই গর্বে সে আর কথা চেপে রাখতে পারলো না।
রাতে খাবার পরে সে তার বাবা মাকে বাঁশিটি দেখিয়ে বললো, এই যে দেখো, আমার বাঁশি; আমি নিজেই কিনেছি।
বাবা মা আঁৎকে উঠলেন, সে কী! টাকা পেলে কোথায়?
“হূঁহ্হু! হেহহে!” বেশ আত্মতৃপ্তির ভাব করলো সে। তারপর বললো,
“গত দুমাসে তোমরা টিফিন খেতে যতো টাকা দিয়েছিলে তার সব টাকা জমিয়ে আমি এটা কিনেছি।”
“কী বলছো? দুমাসের সব টাকা?”
“ইয়েস পাপা, ইয়েস ম্যাম। সব টাকা।”
তার মা হিসেব করলেন যে দুমাসের সব টাকা জমালে সেটা পঞ্চাশ টাকার কাছাকাছি হবে। কিন্তু এ বাঁশির দাম তো আট দশ টাকার বেশি হবে না।
এবার মা তার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বললেন,
“আচ্ছা বাবা, সত্যি করে বলো তুমি কি সব টাকা দোকানীকে দিয়ে এসেছো।”
“হ্যাঁ মম, সব দিয়ে দিয়েছি।”
বলেই সে বাঁশি কেনার সব গল্প শুনিয়ে দিলো।
এবার তার বাবা বললেন, “তুমি তো মহা বোকার মতো কাজ করেছো। এ বাঁশির দাম তো দশ টাকার বেশি নয়।”
শুনে বালকটির সমস- আনন্দ মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো। সে কান্না জুড়ে দিলো। হায় সে কী করেছে!
সে তো আরো ছটি বাঁশি কিংবা অন্য খেলনাও অনেকগুলো কিনতে পারতো। এক বাঁশি কিনতে গিয়ে সে তার সব টাকা ফুরিয়ে দিয়েছে!
বৃষ্টি, তোমার খারাপ লাগলেও আমি বলবো তুমিও সেই বালকের মতো ঠকে যাওয়া এক বোকা বালক।
বাঁশি চিনতে ভুল করার মতো তুমি এখনো মানুষ চিনতে ভুল করে যাচ্ছ! ভুল করে বারবার কষ্ট পাচ্ছো।
প্রথম জীবনে তুমি বোকামি করে অথবা আবেগের কাছে ধরাশয়ী হয়ে একটা ভুল করেছিলে, যা তোমাকে অনেকদিন ভুগিয়েছে।
এখন তুমি আমাকে ভালোবেসে, আমাকে চেয়ে, আরেকটা ভুল করছো। তুমি আমাকে মনেপ্রাণে চেয়ে আসলে বেশি দামে শস্তা বাঁশি কিনতে চাইছো।
আমি যদিও নিজেই সেই রঙিন চকচকে অথচ শস্তা বাঁশি, তবুও আমি তোমাকে বাঁচাতে চাচ্ছি যাতে
তুমি আমাকে চেয়ে আমাকে পেয়ে কখনো না ঠকো। তোমার মতো সুন্দরী চমৎকার একটা মেয়ের আসলে অনেক সুখী
শানিত্মময় জীবন প্রাপ্য, যা তুমি কখনোই আমার কাছে এসে পাবে না। সত্যি কথা কি, তুমি দেখো না, আমি কীভাবে তোমার সাথে কথা বলি?
যতোটা কদর্যভাবে এবং কাঠখোট্টা সুরে আমি তোমার সাথে কথা বলি, আমার ভেতরটা তারচেয়েও কদর্য।
আমার মনটা যে সংকীর্ন, অনুদার, এটা আমি জানি। এতে আমার বেশি কষ্ট নেই। পৃথিবীতে অনেক মানুষেরই মন খুব ছোটো।
আমার সমস্যা হলো এই ছোট্টো মনটা আবার নানা কুটিলতা আর জটিলতায় ভরা। আমার মনের এই চরিত্রের কথা আমি কাউকে বলি না।
তোমাকে বললাম, কারণ তোমার কোনো ক্ষতি আমি চাই না। তোমার মতো প্রকৃতি প্রেমী নরম মনের একটা মানুষ আমার মনের
ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে আটকা পড়ুক এটা আমি মেনে নিতে পারি না।
বৃষ্টি, আমার অনুরোধ, তুমি ফিরে যাও। দয়া করে ফিরে যাও। মনে রেখো, পৃথিবীটা কিন্তু আমার মতো এতোটা খারাপ,
এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে যায় নি। আমার কাছ থেকে একটু মুখ ফিরিয়ে দেখো।
পৃথিবী তোমার জন্যে ভালোবাসার দুহাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তুমি ফিরে যাও। আমি তোমাকে বললাম, তুমি দেখো, আমাকে না পেলেও
অন্য অনেক ভাবে তুমি এতো ভালোবাসা, এতো আদর আর সুখ পাবে যে, ভুলেও আমার কথা তোমার আর মনে পড়বে না।
কারণ, তুমি এ রকমই। কখনো আধো আধো ভালোবাসা বাসতে জানো না। ভালোবাসলে সবটুকু দিয়েই ভালোবাসো।
আজ আমাকে ভালোবাসো বলে মনে হচ্ছে আমাকে ছাড়া তোমার চলবে না। আসলে এটা তোমার আবেগ।
আমাকে ছাড়াই তোমার বিগত বছরগুলো কী দিব্যি চলে গেছে না, বলো? ভবিষ্যতটাও চলে যাবে। এবং আমি আশা করবো বেশ আনন্দেই যাবে।
বৃষ্টি, আমি নিশ্চিত আমার এই চিঠি পড়ে তোমার খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি ততোধিক নিশ্চিত যে একদিন তুমি আমার
উপর খুশি হবে এই ভেবে যে, আমি তোমাকে একটা ভুলের হাত থেকে বাঁচিয়েছি।
যখন একদিন কোনো এক রোদপোড়া অলস দুপুরে অথবা এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় অথবা আকাশ ভরা তারার মোহ ধরা অস্পষ্ট আলোয়
মধ্যরাতে অথবা পূর্ণিমার ভরা চাঁদের জোসনায় ভেসে যাওয়া রাতের শেষ প্রহরে কোনো এক ভালোবাসাময় সুপুরুষ পরম মমতা আর আদরে
তোমাকে বুকে টেনে নেবে সেদিন তুমি ঠিক বুঝবে আমার মতো রোবোট তোমার জন্যে কখনোই উপযুক্ত ছিলো না।
একটা মানুষ আর কতো কদর্য ভাবে বলতে পারে আমি জানি না। আমি তোমাকে ভালোভাবে বলেছি, আবার অনেক কদর্যভাবেও বলেছি।
কোনোভাবে বলেই যখন কাজ হচ্ছে না তখন আমি সত্যিই দিশেহারা। তুমি প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছ, আমার কারণে, আমার ব্যবহারে।
অথচ আমি এটা চাই না। এভাবে কষ্ট পাওয়া তোমাকে মানায় না।
আজকাল তোমার কথা ভাবতে গেলেই বারবার সেই বিখ্যাত আমেরিকান গল্পটা মনে পড়ে। গল্পটা শোনো। তোমার জন্যে খুব প্রযোজ্য।
এক বালকের খুব বাঁশি বাজানোর শখ। সে স্কুল যাবার সময় পথে একদিন এক বংশীবাদককে বাঁশি বাজাতে দেখে।
সেই বাঁশি ওয়ালা হয়তো অতো চমৎকার বাঁশি বাজায় নি; কিন্তু জীবনে প্রথম শোনা সেই বাঁশির মিষ্টি সুর ভীষণ মুগ্ধ করে তাকে।
হঠাৎ করেই বাঁশির প্রতি এক দুর্নিবার টান অনুভব করে সে। তারপরেই সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সেও বাঁশি বাজানো শিখবে।
সেদিন বাসা ফিরেই সে তার বাবাকে সেই বঁশিওয়ালার কথা বললো। তারপরেই চেয়ে বসলো তার নিজের জন্যে একটা বাঁশি।
বললো, সেও সেই রকম সুন্দর করে বাঁশি বাজানো শিখবে। বাবা তার কথা শুনলেন। হাসলেন।
কিন্তু ছেলের পড়াশুনার ক্ষতি হবে বা এসব ঠুনকো আবেগকে পাত্তা দেয়া উচিৎ নয় ভেবে বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক বাঁশি কিনে দিতে রাজি হলেন না।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চেয়ে চেয়ে বাবার কাছ থেকে বাঁশি কিনে না পেয়ে মনের দূ:খে সে সিদ্ধান- নিলো যে সে নিজেই একটা বাঁশি কিনবে।
স্কুলে টিফিন খাবার জন্যে প্রতিদিনই মা তাকে কিছু পয়সা কড়িদিতেন
। সে টিফিন খাওয়া বন্ধ করেদিয়ে সেইটাকা জমাতে লাগলো বাঁশি কিনবে বলে। এদিকে বাঁশি কেনার দুশ্চিন্তায় তার দিন কাটেনা,রাত কাটে না।
কখন তার টাকা জমবে, আর কখন সে বাঁশি কিনবে! মহা অস্থিরতা মনে মনে। প্রতিদিনই সে টাকা গুনে দেখে আর টাকা
বেশি করে জমছে না দেখে মন খারাপ করে বসে থাকে। বাঁশির দাম সে জানে না,
কিন্তু যে বাঁশিতে এতো সুন্দর প্রাণ উতলা করা সুর ওঠে সে বাঁশির দাম নিশ্চয়ই কম নয়- এমনই তার ধারণা।
মাস দুয়েক পর একদিন সকালে সে স্কুল ফাঁকি দিয়েবাঁশি কিনতে বেরিয়ে পড়লো। সংগে দুই মাসে জমানো সমস্ত টাকা।
কিছুদিন আগে সে তার এক বন্ধুর সংগে গিয়ে শহরের মাঝামাঝিতে অবস্থিত একটা বাঁশির দোকান চিনে এসেছিলো।
এখন ছুটলো সোজা সেই দোকানে। একটা কালো লম্বা সরু বাঁশি তার পছন্দ হলো।
এরকমই একটা বাঁশি সে সেই বাঁশিওয়ালাকে বাঁজাতে দেখেছিলো। সেই মোহনীয় সুর তুলতে হলে তাকেও এই বাঁশিই কিনতে হবে।
বালক বাঁশিটি হাতে নিয়ে দোকানীর সামনে গেলো। তারপর তার প্যান্টের পকেট উল্টে সবগুলো টাকা আর কয়েন ঢেলে দিলো মেঝেতে।
তারপর বললো, আমি এই বাঁশিটা কিনবো। দেখুন তো এই টাকার হয় কিনা।
দোকানী দেখলো অনেকগুলো খুচরো কয়েন। বললো, আমি গুণে দেখি, তুমি ততোক্ষণে অন্য বাঁশিগুলোও দেখতে পারো।
দোকানীর কথামতো সে গ্যালারীর সামনে এসে অন্য বাঁশি গুলো দেখতে লাগলো। কিন্তু আর বাঁশি দেখে কি হবে?
সে তো স্থির করেই ফেলেছে যে হাতের কালো বাঁশিটিই সে কিনবে, অন্য বাঁশি নয়। তাতে দাম যতোই লাগুক।
দোকানী গুণে দেখলো যে প্রায় পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু সেই বাঁশির দাম তো মাত্র পাঁচ টাকা। দোকানীর সন্দেহ হলো।
এতো টাকা এই বাচ্চা ছেলে পেলো কোথায়? নিশ্চয়ই তার বাবা মা তাকে বাঁশি কেনার জন্যে এতো টাকা দেয় নি?
তাদের তো মোটামুটি দাম জানা থাকার কথা। তাহলে কি এই বালক বাসা থেকে টাকা চুরি করে এনেছে?
এ কথাই জিজ্ঞেস করার জন্যে দোকানী ডাকলো বালটিকে, “এই যে বাবু, এদিকে এসো।” বালকটি ভাবলো, বোধায় টাকা কম আছে।
দামে হচ্ছে না। কিন্তু আমার কাছে তো আর কোনো টাকা নেই। কিন্তু এ বাঁশি তো আমার কিনতেই হবে।
আজ এবং এক্ষুণি। সে তৎক্ষনাৎ ঠিক করে ফেললো যে সে আর দোকানীকে কোনো টাকাও দেবে না, দোকানীর কোনো কথাও শুনবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ। দোকানীর দিকে না গিয়ে সে বাঁশি নিয়ে দিলো দৌড়। দোকানী প্রথমে থতোমতো খেয়ে গেলো। একি! ছেলেটা কি পয়সা ফেরত নেবে না?
পর মুহূর্তে দোকানীও দৌড়ে এলো। কিন্তু ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বালকটি দৌড়ে দিয়ে সোজা রাস্তায় না গিয়ে
একটা গলিতে ঢুকে পড়েছে। দোকানী আর দেখতে পেলো না তাকে।
সেদিন বালকটি আর স্কুলে গেলো না। স্কুল ছেড়ে দূরের এক মাঠে গিয়ে মনের আনন্দে ইচ্ছে মতো বাঁশি বাজালো।
বাঁশি বাজানো হচ্ছে না, সুর উঠছে না, তবু খুশিতে সে আত্মহারা। মনে মনে স্বপ্ন দেখছে সেও একদিন সেই বংশীবাদকের
মতো মধুর সুর তুলবে বাঁশিতে। দুপুর পার করে বিকেল পর্যন্ত সে সেই নির্জন মাঠে বাঁশি বাজালো। না খেয়ে কোনো খাবার, না পিয়ে কোনো পানীয়।
ক্ষুধা তৃষ্ণার সব উপলব্ধি যেনো নিঃশেষ হয়ে গেছে বাঁশি পেয়ে।
স্কুল ব্যাগে বাঁশিটি ভরে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে প্রতিদিনের মতো যথাসময়ে বাড়ি ফিরলো সে।
প্রথমে ভেবেছিলো যে বাবা মাকে বাঁশি কেনার কথাটা বলবে না। কিন্তু পরে ভাবলো, সে তো আর টাকা চুরি করে বাঁশি কিনে নি, বরং টিফিন
খাওয়ার নিজের পয়সা বাঁচিয়ে কিনেছে। এটা তো তার গর্বেরই বিষয়। এই গর্বে সে আর কথা চেপে রাখতে পারলো না।
রাতে খাবার পরে সে তার বাবা মাকে বাঁশিটি দেখিয়ে বললো, এই যে দেখো, আমার বাঁশি; আমি নিজেই কিনেছি।
বাবা মা আঁৎকে উঠলেন, সে কী! টাকা পেলে কোথায়?
“হূঁহ্হু! হেহহে!” বেশ আত্মতৃপ্তির ভাব করলো সে। তারপর বললো,
“গত দুমাসে তোমরা টিফিন খেতে যতো টাকা দিয়েছিলে তার সব টাকা জমিয়ে আমি এটা কিনেছি।”
“কী বলছো? দুমাসের সব টাকা?”
“ইয়েস পাপা, ইয়েস ম্যাম। সব টাকা।”
তার মা হিসেব করলেন যে দুমাসের সব টাকা জমালে সেটা পঞ্চাশ টাকার কাছাকাছি হবে। কিন্তু এ বাঁশির দাম তো আট দশ টাকার বেশি হবে না।
এবার মা তার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বললেন,
“আচ্ছা বাবা, সত্যি করে বলো তুমি কি সব টাকা দোকানীকে দিয়ে এসেছো।”
“হ্যাঁ মম, সব দিয়ে দিয়েছি।”
বলেই সে বাঁশি কেনার সব গল্প শুনিয়ে দিলো।
এবার তার বাবা বললেন, “তুমি তো মহা বোকার মতো কাজ করেছো। এ বাঁশির দাম তো দশ টাকার বেশি নয়।”
শুনে বালকটির সমস- আনন্দ মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো। সে কান্না জুড়ে দিলো। হায় সে কী করেছে!
সে তো আরো ছটি বাঁশি কিংবা অন্য খেলনাও অনেকগুলো কিনতে পারতো। এক বাঁশি কিনতে গিয়ে সে তার সব টাকা ফুরিয়ে দিয়েছে!
বৃষ্টি, তোমার খারাপ লাগলেও আমি বলবো তুমিও সেই বালকের মতো ঠকে যাওয়া এক বোকা বালক।
বাঁশি চিনতে ভুল করার মতো তুমি এখনো মানুষ চিনতে ভুল করে যাচ্ছ! ভুল করে বারবার কষ্ট পাচ্ছো।
প্রথম জীবনে তুমি বোকামি করে অথবা আবেগের কাছে ধরাশয়ী হয়ে একটা ভুল করেছিলে, যা তোমাকে অনেকদিন ভুগিয়েছে।
এখন তুমি আমাকে ভালোবেসে, আমাকে চেয়ে, আরেকটা ভুল করছো। তুমি আমাকে মনেপ্রাণে চেয়ে আসলে বেশি দামে শস্তা বাঁশি কিনতে চাইছো।
আমি যদিও নিজেই সেই রঙিন চকচকে অথচ শস্তা বাঁশি, তবুও আমি তোমাকে বাঁচাতে চাচ্ছি যাতে
তুমি আমাকে চেয়ে আমাকে পেয়ে কখনো না ঠকো। তোমার মতো সুন্দরী চমৎকার একটা মেয়ের আসলে অনেক সুখী
শানিত্মময় জীবন প্রাপ্য, যা তুমি কখনোই আমার কাছে এসে পাবে না। সত্যি কথা কি, তুমি দেখো না, আমি কীভাবে তোমার সাথে কথা বলি?
যতোটা কদর্যভাবে এবং কাঠখোট্টা সুরে আমি তোমার সাথে কথা বলি, আমার ভেতরটা তারচেয়েও কদর্য।
আমার মনটা যে সংকীর্ন, অনুদার, এটা আমি জানি। এতে আমার বেশি কষ্ট নেই। পৃথিবীতে অনেক মানুষেরই মন খুব ছোটো।
আমার সমস্যা হলো এই ছোট্টো মনটা আবার নানা কুটিলতা আর জটিলতায় ভরা। আমার মনের এই চরিত্রের কথা আমি কাউকে বলি না।
তোমাকে বললাম, কারণ তোমার কোনো ক্ষতি আমি চাই না। তোমার মতো প্রকৃতি প্রেমী নরম মনের একটা মানুষ আমার মনের
ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে আটকা পড়ুক এটা আমি মেনে নিতে পারি না।
বৃষ্টি, আমার অনুরোধ, তুমি ফিরে যাও। দয়া করে ফিরে যাও। মনে রেখো, পৃথিবীটা কিন্তু আমার মতো এতোটা খারাপ,
এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে যায় নি। আমার কাছ থেকে একটু মুখ ফিরিয়ে দেখো।
পৃথিবী তোমার জন্যে ভালোবাসার দুহাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তুমি ফিরে যাও। আমি তোমাকে বললাম, তুমি দেখো, আমাকে না পেলেও
অন্য অনেক ভাবে তুমি এতো ভালোবাসা, এতো আদর আর সুখ পাবে যে, ভুলেও আমার কথা তোমার আর মনে পড়বে না।
কারণ, তুমি এ রকমই। কখনো আধো আধো ভালোবাসা বাসতে জানো না। ভালোবাসলে সবটুকু দিয়েই ভালোবাসো।
আজ আমাকে ভালোবাসো বলে মনে হচ্ছে আমাকে ছাড়া তোমার চলবে না। আসলে এটা তোমার আবেগ।
আমাকে ছাড়াই তোমার বিগত বছরগুলো কী দিব্যি চলে গেছে না, বলো? ভবিষ্যতটাও চলে যাবে। এবং আমি আশা করবো বেশ আনন্দেই যাবে।
বৃষ্টি, আমি নিশ্চিত আমার এই চিঠি পড়ে তোমার খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি ততোধিক নিশ্চিত যে একদিন তুমি আমার
উপর খুশি হবে এই ভেবে যে, আমি তোমাকে একটা ভুলের হাত থেকে বাঁচিয়েছি।
যখন একদিন কোনো এক রোদপোড়া অলস দুপুরে অথবা এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় অথবা আকাশ ভরা তারার মোহ ধরা অস্পষ্ট আলোয়
মধ্যরাতে অথবা পূর্ণিমার ভরা চাঁদের জোসনায় ভেসে যাওয়া রাতের শেষ প্রহরে কোনো এক ভালোবাসাময় সুপুরুষ পরম মমতা আর আদরে
তোমাকে বুকে টেনে নেবে সেদিন তুমি ঠিক বুঝবে আমার মতো রোবোট তোমার জন্যে কখনোই উপযুক্ত ছিলো না।
বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯
মেঘের ভালোবাসা
মেঘের ভালোবাসা
এই শীতের সকালে কে যেন রিহান এর
গায়ে এক জগ পানি ঢেলে দিল।সে ঘুম
থেকে উঠে গেল।
-আমার গায়ে পানি দিল কে রে?
-আমি দিয়েছি।
এই বলে মেঘ শুভ দিকে চোখ বড়
করে তাকালো।
শুভ বুঝতে পারলো আজ কিছু একটা হয়েছে।
মহারানী রেগে আছে।আল্লাহ ই জানেন
কি আছে কপালে।
-পানি দিলি কেন?
-আবার জিগায় পানি দিলি কেন?আমার
ইচ্ছা হইছে দিছি।
-ইচ্ছা হলেই দিবি?
-আজ যে আমার বার্থ ডে মনে আছে তর?
আমাকে উইস করিস নি কেন?
রিহান এর মনে ছিল না আজ যে মেঘের
বার্থ ডে।উইস ত করে নি।বাট কিছু
একটা বলে ত কাটাতে হবে।তাই সে বললো
-আমি ত জানি ই আজ আপনার জন্মদিন।
-তাহলে উইস করিস নি কেন?জানিস না তুই
সবার আগে উইস না করলে আমার খারাপ
লাগে?
বলতে বলতেই চোখে জল এসে গেল মেঘ এর।
-হুম জানি ত।কিন্তু ভাবছিলাম এবার অন্য
কিছু করবো।
-কি করবি?
-সবার শেষে উইস করবো।প্রতিবার ত সবার
আগে করি।।তাই ভাবছিলাম এবার সবার
পরে উইস করবো।
-হইছে হইছে এত মিথ্যা আর বলতে হবে না।
রেডি হয়ে আসেন,বাইরে ঘুরতে যাব।
রিহান আর মেঘ ছোট কালের বন্ধু।
তারা একসাথে সেই স্কুল কলেজ
থেকে পড়তেছে।তাদের মাঝে রয়েছে গভীর
বন্ধুত্ব ও।তবে কেউ জানে না এর বেশি কিছু
আছে নাকি।রিহান
রেডি হয়ে এলে তারা বের হয়ে ঘুরতে।
একটা পার্কে বসে আছে দুজনে।
-আমাকে গিফট দিলি না রিহান?
-হুম।দিব।কি চাস বল?
-তুই যা দেবার দে।
-না তুই যা চাইবি তাই দিব।বল কি চাস?
-সত্যিই যা চাইবো দিবি?
-হ্যা রে পাগলি।
-আমি তকে চাই,
-আমাকে দিয়ে কি করবি তুই?
-বেধে রাখবো মনের মাঝে
-না হবে না তাহলে,,,
-কেন দিবি না তকে?
-বেধে রাখলে দিব না
-তাহলে
-আমাকে তর
কোলে মাথা রেখে থাকতে দিলে সারা জীবন
তাহলে দিব।
-তাহলে নিব না আমি
-কেন নিবেন না?
-আমি আরো ভাবলাম আমি তর
বুকে মাথা রাখবো তা না তুই তুই আমার
কোলে মাথা থাকবি।তাহলে আমার কি হবে।
-তর কিছুই হবে না।
এই কথা শুনে মেঘ কান্না শুরু করলো।
রিহান তাকে একটা থাপ্পড়
দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।এখন ত
হ্যাপি পাগলী।
-হ্যা সারা জীবন রাখবি ত?
-হুম।রাখবো।
রিহান এর বুকে মাথা রেখে মেঘ
ভাবতে লাগলো সে তার সেরা গিফট
পেয়ে গেছে।আর কিচ্ছু চায় না সে।
গায়ে এক জগ পানি ঢেলে দিল।সে ঘুম
থেকে উঠে গেল।
-আমার গায়ে পানি দিল কে রে?
-আমি দিয়েছি।
এই বলে মেঘ শুভ দিকে চোখ বড়
করে তাকালো।
শুভ বুঝতে পারলো আজ কিছু একটা হয়েছে।
মহারানী রেগে আছে।আল্লাহ ই জানেন
কি আছে কপালে।
-পানি দিলি কেন?
-আবার জিগায় পানি দিলি কেন?আমার
ইচ্ছা হইছে দিছি।
-ইচ্ছা হলেই দিবি?
-আজ যে আমার বার্থ ডে মনে আছে তর?
আমাকে উইস করিস নি কেন?
রিহান এর মনে ছিল না আজ যে মেঘের
বার্থ ডে।উইস ত করে নি।বাট কিছু
একটা বলে ত কাটাতে হবে।তাই সে বললো
-আমি ত জানি ই আজ আপনার জন্মদিন।
-তাহলে উইস করিস নি কেন?জানিস না তুই
সবার আগে উইস না করলে আমার খারাপ
লাগে?
বলতে বলতেই চোখে জল এসে গেল মেঘ এর।
-হুম জানি ত।কিন্তু ভাবছিলাম এবার অন্য
কিছু করবো।
-কি করবি?
-সবার শেষে উইস করবো।প্রতিবার ত সবার
আগে করি।।তাই ভাবছিলাম এবার সবার
পরে উইস করবো।
-হইছে হইছে এত মিথ্যা আর বলতে হবে না।
রেডি হয়ে আসেন,বাইরে ঘুরতে যাব।
রিহান আর মেঘ ছোট কালের বন্ধু।
তারা একসাথে সেই স্কুল কলেজ
থেকে পড়তেছে।তাদের মাঝে রয়েছে গভীর
বন্ধুত্ব ও।তবে কেউ জানে না এর বেশি কিছু
আছে নাকি।রিহান
রেডি হয়ে এলে তারা বের হয়ে ঘুরতে।
একটা পার্কে বসে আছে দুজনে।
-আমাকে গিফট দিলি না রিহান?
-হুম।দিব।কি চাস বল?
-তুই যা দেবার দে।
-না তুই যা চাইবি তাই দিব।বল কি চাস?
-সত্যিই যা চাইবো দিবি?
-হ্যা রে পাগলি।
-আমি তকে চাই,
-আমাকে দিয়ে কি করবি তুই?
-বেধে রাখবো মনের মাঝে
-না হবে না তাহলে,,,
-কেন দিবি না তকে?
-বেধে রাখলে দিব না
-তাহলে
-আমাকে তর
কোলে মাথা রেখে থাকতে দিলে সারা জীবন
তাহলে দিব।
-তাহলে নিব না আমি
-কেন নিবেন না?
-আমি আরো ভাবলাম আমি তর
বুকে মাথা রাখবো তা না তুই তুই আমার
কোলে মাথা থাকবি।তাহলে আমার কি হবে।
-তর কিছুই হবে না।
এই কথা শুনে মেঘ কান্না শুরু করলো।
রিহান তাকে একটা থাপ্পড়
দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।এখন ত
হ্যাপি পাগলী।
-হ্যা সারা জীবন রাখবি ত?
-হুম।রাখবো।
রিহান এর বুকে মাথা রেখে মেঘ
ভাবতে লাগলো সে তার সেরা গিফট
পেয়ে গেছে।আর কিচ্ছু চায় না সে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)